লজ্জাবতীর পাতা ছুঁলে নুয়ে পড়ে কেন?

লজ্জাবতীর পাতা ছুঁলে নুয়ে পড়ে কেন?

May 20, 2024 - 10:30 AM
 0

ছোঁয়া লাগলে লজ্জাবতী গাছের পাতা নুয়ে পড়ে— এই পরীক্ষা করে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু দেখিয়েছিলেন যে মানুষের মতো গাছেরও অনুভূতি আছে। আগুনের ছেঁকা লাগলে আমরা হাত সরিয়ে নিই, চোখে বালি পড়লে চোখে পানি আসে - এসব যদি আমাদের অনুভূতির লক্ষণ হয়, তা হলে ছুঁলে লজ্জাবতী গাছের পাতা যখন নুয়ে পড়ে তখন তাকেই -বা অনুভূতির নয় বলে উড়িয়ে দেব কেন?

লজ্জাবতীর ছোট ছোট পত্রকগুলো আলো পেলে খুলে যায়, অন্ধকারে বন্ধ হয়। কিন্তু হঠাৎ ছুঁলে লজ্জাবতীর পাতা নুয়ে তো পড়েই, ছোট পত্রকগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। লজ্জাবতীর পাতা কেন নুয়ে পড়ে, এ-ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা অনেককিছুই জানতে পেরেছেন।

লজ্জাবতীর পাতার গোড়া একটু মোটা ফোলা থাকে। এবং এই গোড়ার ভেতরে বড় বড় অনেক কোষ আছে। এই কোষগুলো যখন পানি পায় তখন ফুলে ওঠে। আর তখন লজ্জাবতী পাতার ডালটি সোজা হয়। কিন্তু যখন পাতাতে স্পর্শ করলে ওই ফোলা কোষগুলো থেকে পানি বাইরে বেরিয়ে পিছনদিককার কোষে চলে যায়, ফলে কোষগুলো আবার চুপসে পড়ে। চোপসানো কোষে পানির চাপ কম থাকে, তাই লজ্জাবতী পাতার ডালটি আর সোজা থাকতে পারে না । তাই ডালটি নিচের দিকে নুয়ে পড়ে।

যে-পাতাটিকে ছোঁয়া হয়, এই ব্যাপারটা শুধু যে তার মধ্যেই নজরে আসে, এমন নয় – আস্তে আস্তে তা উপর-নিচে সব পাতাতেই ছড়িয়ে যায় এবং এইভাবে সব পাতাই নুয়ে পড়ে। শুধু পাতাগুলো নুয়েই পড়ে না, পাতার ছোট ছোট পত্রকগুলোও জোড়া লেগে বন্ধ হয়ে যায়।

বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, লজ্জাবতীর পাতা স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে একটা তড়িৎ প্রবাহ গাছের সারাশরীরে ছড়িয়ে পড়ে। অ্যাসিটাইল কোলিন' জাতীয় একধরনের রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে এই তড়িৎ প্রবাহিত হয়। এই রাসায়নিক পদার্থ খুবই দ্রুত এক কোষ থেকে আর-এক কোষে যেতে পারে। এর প্রভাবেই পাতার গোড়ার ফোলা কোষগুলো থেকে খনিজ লবণ হঠাৎই বাইরে বেরিয়ে আসে। খনিজ লবণ বাইরে বেরিয়ে এলে তার সঙ্গে ফোলা কোষ থেকে পানিও বেরোয়। আর পানি বেরিয়ে এলেই ফোলা কোষগুলো চুপসে যায়। কোষ চুপসে গেলে তাদের চাপও কমে যায়, ফলে পাতার ডালটি আর সোজা থাকতে পারে না- নুয়ে পড়ে।