ইনসুলিন আবিষ্কার হলো কিভাবে?
ইনসুলিন

ইনসুলিন আবিষ্কার হলো কিভাবে?

Feb 23, 2024 - 6:28 AM
 0

এক একটি রোগের ওষুধ আবিস্কার করতে কোনো কোনো বিজ্ঞানীর সারাজীবন কেটে যায়। কেউ হয়তো শেষ জীবনে সফল হন আবার অনেকে সফল হওয়ার আগেই মারাও যান। স্যার ফ্রেডেরিক ব্যানটিং ও চার্লস বেস্ট তাঁদের প্রায় সারাজীবন ব্যয় করেছিলেন ইনসুলিন আবিষ্কারের পেছনে। ইনসুলিন হচ্ছে এক প্রকারের হরমোন, যা প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় গ্রন্থির মধ্যে তৈরি হয়। ইনসুলিন ডায়াবেটিস রোগ নিরাময় করে।

ইনসুলিন আবিষ্কার হলো যেভাবে।
ইনসুলিন যেভাবে কাজ করে।

 ডা. ব্যানটিং দেখতে পান যে, ১৮৮৯ সালে জার্মান বিজ্ঞানী মিনকেসটি লিখেছেন, কুকুরের প্যানক্রিয়াস গ্রন্থি কেটে বাদ দিলে রক্তের মধ্যে চিনির পরিমাণ বেড়ে যায়। তারা খুব ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ে। তারপর রোগ হতে হতে মারা যায়। ১৯২০ সালের এক রাতে ডা. ব্যানটিং পড়ছিলেন। তিনি দেখলেন যে, ১৮৬৯ সালে জার্মান চিকিৎসাবিজ্ঞানী পল ল্যাঙ্গারহ্যান্স লিখেছেন, প্যানক্রিয়াসের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষ এক জায়গায় দ্বীপপুঞ্জের মতো জড়ো হয়। ডায়াবেটিক রোগে যারা মারা যান তাদের এই কোষগুলো শুকিয়ে যায়। এই কোষগুলোর নাম দেওয়া হয় আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স।

১৯০১ সালে ডা. অপি ডায়াবেটিকে মারা যাওয়া রোগীদের প্যানক্রিয়াস কেটে দেখেছিলেন যে, আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স এর কোষগুলো শুকনো এবং ছোট। এই সূত্র ধরে ডা. ব্যানটিং গবেষণা শুরু করলেন। তাঁর মনে হলো কোষগুলো নিশ্চয়ই কোনো পদার্থ তৈরি করে, যা ডায়াবেটিক রোগ নিরাময় করে।

কিন্তু কি সেই পদার্থ?

১৯২১ সালে ডা. ব্যানটিং প্রফেসর ম্যাকলিয়োডের কাছে গিয়ে বললেন, আমাকে ১০ টি কুকুর আর কয়েক মাসের জন্য একজন সহকারী দিন।

কেন? প্রফেসর ম্যাকলিয়োডের প্রশ্ন।

আমার মনে হচ্ছে, প্যানক্রিয়াসের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স কোষ থেকে হরমোন তৈরি হয়, যা আমাদের ডায়াবেটিক রোগ প্রতিহত করে। প্রফেসর ম্যাকলিয়োড ব্যানটিংয়ের কথা ঠিকমতো বিশ্বাস করলেন না কিন্তু না-ও বললেন না। ১০টি কুকুর ও ব্যানটিং এর সহকারী হিসাবে নিযুক্ত করা হলো চার্লস বেস্টকে। দু’জনে একমনে কাজ করতে লাগলেন। 

ইনসুলিন

তাঁরা একটি কুকুরের প্যানক্রিয়াস কেটে ফেললেন। যখন কুকুরটি শুকিয়ে মরার অবস্থায় গিয়ে পড়লো তখন আর একটি কুকুরের প্যানক্রিয়াস কেটে বের করে তা চেঁছে লবণ পানি দিয়ে নির্যাস তৈরি করে ইনজেকশন দিলেন। এতে কুকুরটি কয়েকদিন বাঁচলো। ব্যানটিং ভাবলেন প্যানক্রিয়াসে দু’রকমের রস আছে। এক রকমের রস খাদ্যবস্তুকে হজম করায় এবং অন্য রকমের রস ডায়াবেটিক রোগ প্রতিহত করে।

কিন্তু কিভাবে এই দু’রকমের রসকে আলাদা করবেন তিনি?

ব্যানটিং এবার কসাইয়ের কাছ থেকে ১৩টি প্যানক্রিয়াস আনলেন। সেগুলো লবণ পানিতে না ভিজিয়ে অ্যাসিড অ্যালকোহলে ভেজালেন। এর ফলে হজমের রস একেবারেই নষ্ট হয়ে গেলো কিন্তু আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স রসের কোষগুলো ভালো থাকলো।

ইনসুলিন

এই কোষ থেকে নির্যাস বের করে তিনি এর নাম দিলেন আইলেটিন। এই সময়ে ডা. ব্যানটিং এর এক বন্ধু ডাঃ জো ডায়াবেটিকে আক্রান্ত হয়ে মরণাপন্ন হয়ে পড়েন। নিরুপায় হয়ে জো ব্যানটিং এর কাছে যান। ব্যানটিং অনেক ভাবনা-চিন্তা করে ডাঃ জোয়ের শরীরে আইলেটিন ইনজেকশন দিলেন। আস্তে আস্তে জো সুস্থ হয়ে উঠলেন। তখন থেকে তিনজনে মিলে ডায়াবেটিক রোগীদের আইলেটিন ইনজেকশন দিয়ে সুস্থ করে তুলতে লাগলেন।

 প্রফেসর ম্যাকলিয়োড সার্বক্ষণিকভাবে এই গবেষণার পরামর্শ ও তদারকি করে যাচ্ছিলেন। সে সময় তিনি ইউরোপ ভ্রমণে গিয়েছিলেন। ইউরোপ থেকে কানাডার অন্টারিও হাসপাতালে ফিরে এসে ব্যানটিং এর আবিস্কার দেখে তিনি অবাক হয়ে গেলেন। তিনি আইলেটিন এর নাম বদলে দিলেন ইনসুলিন। ১৯২৩ সালে ডা. ব্যানটিং ইনসুলিন আবিস্কারের জন্য নোবেল প্রাইজ পেলেন। সহযোগী হিসেবে পেলেন ম্যাকলিয়োড।